কন্যা হলো সতিত্বের
প্রতিক, কিন্তু আক্ষরিকভাবে এটা বুঝে নেয়াটা ঠিক হবে না। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি
যে, সেপ্টেম্বরে জন্ম নিলেই যে সবাই সতি-সাধ্যি হবে এমনটি নিশ্চয়ই নয়। যদিও অনেক
কন্যাই শেষ পর্যন্ত অবিবাহিত কিংবা বিপত্নিক জীবন যাপন করে কিন্তু তারপরও যথেষ্ট
সংখ্যক কন্যা রয়েছে যারা বিবাহিত জীবনে সার্থকতার আশীর্বাদটা ঠিকই উপভোগ করছে।
কন্যাদের কাছে বিবাহ বন্ধনের ব্যাপারটা স্বাভাবিক নয় আর তাই হুট করে কিংবা আবেগ
তাড়িত হয়ে কিছু একটা করে বসা তাদের কর্ম নয় কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে অনেক
অনেক কন্যা জাতকই বিবাহিত জীবনে সুখী হবার কৌশল রপ্ত করে ওস্তাদ হয়ে উঠেছেন এবং
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা তাদের পরিবারের প্রতি উৎসর্গিত।
বিবাহিতই হোক কিংবা হোক ব্যাচেলর কন্যা জাতককে অনেকের মধ্যে শনাক্ত করে নেয়াটা নেহাতই সহজ। তার একটা কারণ হলো কন্যা জাতকেরা নিশ্চুপ থাকতে পছন্দ করে। অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলার মানুষও সে নয়, বরং সে একাকী এক কোণায় স্খান নিয়েই সস্তি বোধ করে। সমার্থক শব্দের ডিকশনারী বগলে গুজে এক কোণে দাড়ানো আকর্ষণীয় ব্যক্তিটাকে কি লক্ষ্য করেছেন? যার মনটা ঘড়ির কাটার মতোই সার্বক্ষণিক কর্মরত এবং প্রতিটি মুহূর্তেই সূক্ষ্মতম ব্যাপারটিও যার নজর এড়াচ্ছে না? আপনি যদি তাকে কাছ থেকে অবলোকন করেন তাহলে দেখবেন যে প্রতিটি মিনিটই সে পরিপূর্ণ পর্যবেক্ষণের সাথে অতিবাহন করছে। সে একজন কন্যা জাতক। বাস আসবার অপেক্ষা করছে যে শান্ত মেয়েটি তাকে লক্ষ্য করেছেন? তার চোখগুলো নম্র এবং সুন্দর। তার হাতের পরিস্কার শুভ্র গ্লোভগুলো লক্ষ্য করেছেন, কিংবা তার শান্ত ব্যবহার? বাস ভাড়া দেবার জন্যে যা টাকা লাগে ঠিক সে পরিমান টাকা তার হাতের মুঠোও লুকানো রয়েছে। ৫ ডলারের নোটের খুচড়ো আছে কি না সে প্রশ্ন বাস ড্রাইভারকে করার কোন আহ্লাদ তার মধ্যে নেই। সে একজন কন্যা জাতিকা।
আপনি যদি পূর্ণ নৈতিক শুদ্ধতা অর্জনে আগ্রহী এইসব মানুষগুলোকে খোঁজাখুঁজি করেন তো সামাজিক সমাবেশে যাবার দরকার নেই। কোন ককটেইল পার্টিতে অতি সামাজিক ব্যক্তিত্বের ভূমিকায় অবতির্ন হবার পরিবর্তে সে বরং তার অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকবে রাত পর্যন্ত। কন্যা জাতকেরা জন্ম থেকেই একটি প্রবৃত্তি পেয়েছে যে তারা জনবহুলতা পছন্দ করে না, আর তাই তারা পরোয়াহীন সামাজিক মেলামেশায় তেমন সাচ্ছন্দবোধ করে না। অনেক সময় তারা হতাশাগ্রস্খভাবে পার্টিতে যোগ দেয়, কিন্তু তাদের দায়িত্ব সবসময়ই কাছে টানে যে খুব একটা ছেলেমানুষিতে তারা মেতে উঠতে সক্ষম হয় না। কখনও কখনও কন্যা জাতকেরা মকরদেরকেও পার্টিতে ভোলাভালা নবজাতকের মতো ম্লান করে তুলতে পারে, তবে সে পর্যায়ে যেতে তাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। বাতাসে প্রাসাদ গড়তে কিংবা কাঠালের আমসত্ব বানিয়ে খাওয়াবার স্বভাব তার মধ্যে নাই। দিবাস্বপ্ন দেখবার মতো সময় কন্যাদের নেই, এবং পতিত তারাকে দিয়ে সুপ্ত ইচ্ছা পোষণ করবার ক্ষেত্রে সে খুবই ক্লান্ত। কন্যা জাতককে দেখে আপনার মনে তার সম্বন্ধে যে ধারণাটা প্রথমে উদ্ভব হবে সেটা হলো সে কোন একটা বিশেষ সমস্যায় আছে এবং সমস্যাটার সমাধানের জন্যে চেষ্টা করছে - কিংবা একটা অর্থহীন অনুভবের জন্ম দেবে যে সে গোপনে কোন কিছু নিয়ে দু:শ্চিন্তা করছে। সম্ভবত সত্যিই সে করছে। কন্যাদের মনে প্রাকৃতিকভাবেই দু:শ্চিন্তা চলে আসে।
কেউ হয়তো বলবে যে, দু:শ্চিন্তা করাটা তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারটা বিমূর্ত এবং ধরা-ছোয়া যায় না, কিন্তু তার আনন্দদায়ক হাসিটা সবসময়ই তার ভেতরের বড় সমস্যাগুলোকে গোপন করতে সক্ষম।যদিও জন্মকুষ্ঠিতে অন্যান্য গ্রহের প্রভাব জনাব মোখলেছ উদ্দিনের স্বভাবকে কন্যা জাতকের সাধারণ স্বভাব বৈশিষ্ট থেকে পৃথক করে তুলতে সক্ষম, সেক্ষেত্রে সাধারণভাবে আপনি বরং নম্র, এবং সাধারণত মায়াময় এবং শান্ত দুটো চোখ খুঁজে দেখতে পারেন। কন্যাদের চোখদুটো এতই পরিস্কার যে আপনি তার চোখে নিজের প্রতিচ্ছবি সেখানে দেখতে পাবেন।
সে চোখগুলোতে বুদ্ধিমত্তা আর চিন্তা-ভাবনার স্বচ্ছতা ঝলমল করে। তাদের অভিব্যক্তিতে এমন একটা প্রশান্ত ব্যাপার আছে যে সেটা তার নিজের ভেতরের গোপন দু:শ্চিন্তাগুলোকে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম। তাদের অধিকাংশই অত্যন্ত আকর্ষণীয়, তাদের নাক তীক্ষ, কান, ঠোঁট সুন্দর। নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে সৌন্দর্যের কিংবা আকর্ষণের কোন অভাব নেই, কিন্তু কিছু কিছু খারাপ মুহূর্তে তাদের আত্মঅহংকারের ছটা এসে লাগতে পারে। কন্যারা তাদের ফটোগ্রাফের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত মনোভাব পোষণ করে, এবং নিজেদের চেহারা নিয়েও তারা চরম খুতখুতে, সেটা বাস্তবেই হোক কিংবা হোক ছবির জগতে। আপনি যদি পর্যবেক্ষণকারী হয়ে থাকেন তো নিশ্চই দেখেছেন আয়নার সামনে দাড়িয়ে যখন তারা ভাবে আশে পাশে কেউ নেই তখন তারা কেমন খুৎখুৎ করে। তারা সবসময়ই পরিপাটি পোশাক পড়ে, সাধারণত খুবই খুতখুতে, রক্ষণশীল বললেও বেশি বলা হয় না। কন্যা জাতক মরিস শেভালিয়ে বরং গান ছাড়া ধরা পড়াকেই শ্রেয় মনে করতেন কিন্তু তার শার্টে টাই থাকবে না এটা ভাবতে পারতেন না।
কন্যা জাতকেরা সাধারণত ছোটখাট মানুষ, নিশ্চিতভাবেই দৈত্য দানোর মতো নয়, কিন্তু সে পুরুষালী, এবং তার ভঙ্গুর চেহারাটা যে ধারণা দেয় তার থেকে বরং অনেক বেশি শক্তির অধিকারী। এই রাশির মানুষগুলো বরং অন্যান্য পুরুশালী রাশির মানুষগুলোর থেকে অনেক বেশি সময় ধরে তীব্র কাজের চাপ সহ্য করে থাকতে পারে - অবশ্য যদি সেই চাপে তাদের নার্ভাস ব্রেকডাওন না ঘটে তবেই। যদিও তারা খুবই সমর্থ এবং ঠান্ডা প্রকৃতির কিন্তু তাদের ভেতরের দু:শ্চিন্তা তাদেরকে মলিন করে দেয় এবং এর ফলে পরিপাক এবং আবেগের সমতাটা নষ্ট হয়। যতটুকু কাজ তারা নিরাপদে করতে সক্ষম তার থেকে বেশি করে দায়িত্ব শেষ করতে গিয়ে নিজেদের ভেঙ্গে পড়বার মতো অবস্খায় পতিত হওয়াটাই বরং দূর্বল স্নায়ুযুক্ত কন্যা জাতকদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে। যদি তাদের মস্তিষ্কে কোন চাপ না পড়ে তবে তারা তাদের সুচারু এবং সুদক্ষ কর্মক্ষমতা নিয়ে বেশ শান্তভাবেই কাজ সমাধা করতে সক্ষম।
কন্যারা প্রশ্নাতীতভাবে নির্ভরযোগ্য এবং দায়িত্বপরায়ণ। বলা বাহুল্য, কোথাও তাদের যেতে ইচ্ছে না হলে তারা অসুস্খতার ভানও করতে সক্ষম। এই সময় কন্যাসুলভ অভিনয়ের প্রতিভাটাও তার কাজে আসে। কখনও কখনও তারা নিজেদের মধ্যে একটা কাল্পনিক অসুস্খতাকেও জন্ম দেয়, কিন্তু তাদের শান্ত চোখ এবং বুধ-শাসিত ঠান্ডা মস্তিষ্ক তাদের এধরনের কপট চিন্তাগুলোকে ক্ষণস্খায়ী করে তোলে। তারা রূপচর্চা, খাওয়াদাওয়া, কাজকর্ম এবং প্রণয়ের ব্যাপারে খুতখুতে। আপনার কন্যা জাতক বন্ধু, যাকে দেখলে মনে হয় যে সে এই মাত্র গোসল করে এসেছে, প্রকৃতই সে হয়তো সেটা করেছে। আপনার যে কোন চারজন বন্ধু একদিনে মোট যতবার গোসল করে তার থেকেও বেশি গোসল করে আপনার কন্যা জাতক বন্ধুটি।
স্বাস্খ্য সম্পর্কে তার নির্ভূল ধারণা রয়েছে, অলসতার ব্যাপারে তার ধৈর্য্য কম এবং জীবন ও মানুষ সম্পর্কে ঘোর মগ্ন হয়ে থাকার স্বভাবটা তার মধ্যে নেই, এমনকি প্রণয়ে পড়েও নয়। কন্যা জাতক সে নারীই হোক কিংবা পুরুষ, প্রণয়ের মেঘ তার চোখে কখনই এমন পর্দা দিয়ে দেয় না যে সে তাদের সম্পর্কের কুফল কিংবা প্রিয় মানুষটির দোষ ত্রুটি দেখতে অক্ষম হয়ে উঠবে। আজকের দিনের প্রবাদটি ব্যবহার করলে বলতে হয় কন্যারা জানে, “কোথায় এটা রয়েছে,” যদিও গালি-গালাজ অপছন্দকারী কন্যা জাতকেরা হয়তো এই প্রবাদটি শুনে ঘৃণায় মুখ কুচকাবেন। অবশ্য অগাস্টেও শেষে কিংবা সেপ্টেম্বরে জন্ম নেয়া সবাই যে খুতখুতে, ছেবলামিপূর্ণ এবং ঘাড়তেড়া গোছের হবে এমনটি ভাববার অবকাশ নেই। অনেক কন্যা জাতকই বুধের বিচক্ষণতা পায় - যদি আপনি তাদের পাশকাটা মন্তব্যগুলো শুনে থাকেন - এবং তারা বুধসুলভ আকর্ষনীয় একটা আলো ছড়ায়, যেটা উপেক্ষা করা কঠিন। আর এই ক্ষেত্রে সোফিয়া লরেনের উদাহরণটা নিশ্চয়ই সব বিতর্কের অবসান করে দেবে। আপনার হয়তো এমন কোন কন্যা জাতকের সাথে দেখা হবে যে তার মানসিক দিকগুলো ঠিকঠাক রাখতে গিয়ে নিজের চারপাশটার দিকে খুব একটা নজর দিতে পারে নি, অবশ্য কোন একটা অবসরে। তাই বলে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেন না। আগে হোক পরে হোক দেখবেন সে ঠিকই কার্পেটে পড়ে থাকা পিনটা সে উঠিয়ে ফেলে দেবে, তার চুল আচড়াবে এবং নিজের কাধের উপর থেকে ছেড়া সূতোটা টেনে সরিয়ে দেবে। যদিও কন্যা জাতকেরা কদাচিৎ দু একটা অসম্ভব স্বপ্ন দেখতেও পারে, কিন্তু প্রায়ই তাদেরকে দেখা যায় যে তারা সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন মনে পুষে রাখে, যদিও তাদের যুক্তিবাদী মনে ঠিকই তারা জানে যে, হয়তো সেগুলো শুধু স্বপ্নই। অর্থাৎ তারা নিজেরাই সন্দেহ পোষণ করে যে স্বপ্নগুলো হয়তো বাস্তব রূপ পাবে না।
অশ্লীলতা, বোকামী কিংবা উগ্র আচরণে যখন কন্যা জাতকেরা বিরক্ত হয়ে ওঠে তখন হঠাৎ করেই তারা বদমেজাজী হয়ে ওঠে, অধৈর্য হয়ে পড়ে, বকাঝকা করতে থাকে এবং ভীত হয়ে ওঠে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই তারা ভদ্র মানুষ, তাদের সঙ্গ বেশ চমৎকার, বিশেষ করে রোগীদের শয্যার পাশে। সবচে সুখ্যাত নার্সদের কয়েকজন এই কন্যা রাশিরই জাতক ছিলেন, কেননা তাদের রয়েছে সহানুভূতি জানাবার দক্ষতা এবং মানুষকে খুশি করবার সামর্থ। আপনার মাথা ব্যথা হলে আপনার কন্যা জাতক বন্ধুটিই হয়তো দৌড়ে ডাক্তার খানায় গিয়ে আপনার ওষুধ নিয়ে আসবে। কিন্তু আপনি যদি তার অবস্খানে থাকেন তবে আপনাকে আর দৌড়ে ডাক্তার খানায় যেতে হবে না, কেননা একটা ছোটখাট ডাক্তারখানা সে তার বাসাতেই গড়ে তুলেছে। তার বাথরুমের ওষুধের ক্যাবিনেটটা সাধারণত পেট ব্যথার ওষুধ দিয়ে ভরা, কিংবা, আমাষা কিংবা হজমের সমস্যাজনিত যেকোন ওষধ তার কাছে থাকবে। সময় পেলে একবার উকি দিয়ে দেখুন। ওষধ কি দিয়ে তৈরি হচ্ছে সেগুলোর প্রত্যেকটি সম্পর্কে প্রচ্ছন্ন ধারণা না নিয়ে সে ওষধ সেবন কওে না, তাই আপনার মাথা ব্যথা কেন হলো সে ব্যাপারটি বিবেচনায় রেখে কোন ওষধটি আপনার সবচে বেশি প্রযোয্য সেটা সে সুন্দর ভাবে আপনাকে জানিয়ে দিতে পারবে।
যসব কন্যা জাতকেরা প্রায়ই ভ্রমণ করে তারা তাদের বহনযোগ্য ওষধের বাক্সটা সাথেই রাখে। শুধু কিছু পিল, এবং সিরাপের বোতলের জন্যে প্রয়োজনে তারা একটা অতিরিক্ত স্যুটকেইসও বহন করতে রাজি। যদি তারা কোন একটা বিশেষ সাবান কিংবা লোশন ব্যবহার করে অভ্যস্ত হয় তবে তারা সেটাও সেই স্যুটকেইসে ঢুকিয়ে দেবে। যদি এমন কোন শহরে গিয়ে তারা আটকে পড়ে যেখানে তাদের প্রিয় প্রসাধন, কিংবা ওষধটি পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে সত্যিই এটা তাদেরকে এক বিড়াট সমস্যায় ফেলে দেয়। সাধারণত সে সাবান কিংবা শ্যাম্পু এক কেইস ধরে কেনে, কেননা তাতে করে সস্তায় পাওয়া যায় - নতুবা একসাথে এক ডজন কেনে, যেটা একটা কারণ যে সে ভ্রমণের মাঝখানে কোন কিছু কিনতে আগ্রহী নয়।
কখনও কখনও কন্যা জাতকেরা নিজেদের পানি নিজেরাই বহন করে। হাসবেন না ু আপনি কি জানেন পানির মধ্যে বিদেশী পদার্থ যেগুলো থাকে সেগুলো আপনার পরিপাকে কি সমস্যা ঘটাতে পারে। এর উত্তর পাবেন কন্যাদের কাছ থেকে। যখন এই মানুষগুলো কোন স্বভাব গঠন করে, তখন প্রকৃতই তাদের সেই স্বভাবটা গঠিত হয়, আর ভ্রমণের সময় স্বভাবটাকে বিসর্জন দেয়া যায় এই মনোভাব তাদের নয়। যদি তার স্বভাব হয় যে সে তার মোজা বাম পাশের মাঝের ড্রয়ারটাতে রাখবে তাহলে ভ্রমনে বের হয়ে কোন হোটেলের কামড়ায় ওয়্যার ড্রোবে তেমন ড্রয়ার না থাকলে বিপদেরই কথা। তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেবে। হয়তো সে মোজাগুলোকে অবশেষে তার স্যুটকেইসেই রেখে দেবে। কিন্তু তার ঘুমটা ঠিকমতো হবে না। পরের দিন সকালে হোটেলের ওয়েট্রেস ঠিকই বুঝে নেবে যে যখন কন্যা জাতক তিন মিনিট পরে নাস্তা আনতে বলবে, তখন সে ঠিক তিন মিনিটই বোঝাচ্ছে কম বা বেশি নয়। কিংবা যখন সে বলবে চাদরের উজ্জ্বল দিকটা উপরে হবে তখন সেটাই সে বলেছে, উজ্জ্বল দিকটা নিচে নয়। আর যখন ওয়েট্রেস তার কথার সূক্ষ্ম দিকগুলো মনে রেখে কাজ করবে তখন তাকে বড় একটা বখশিস দিতে সে কুন্ঠা করবে না।
একজন কন্যা জাতক আপনার মন্তব্যকে চুলচেড়া যুক্তি তর্ক দিয়ে সমালোচনা করবে, যেটা আপনাকে রাগিয়ে তুলতে পারে, কিন্তু আপনি যদি তর্কে আটকে যান, তাহলে সে আপনার কথাগুলোকে দ্রুত পুনোরুদ্ধার করতেও এগিয়ে আসবে, এবং সেক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্যটা উপকার ব্যতিত মোটেও অন্য কিছু নয়। যদি আপনার কাজ আপনাকে সূক্ষ্ম বিষয়গুলোর প্রতি বিরক্ত করে তোলে তো কন্যাজাতক বন্ধুটি তার হাতা গুটিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে লেগে যাবে। এটা কন্যাদের আত্মগরিমা নয় যে তারা তাদের কাজ দিয়ে আপনাকে দেখাতে চায়। এটা হলো বুধের শাসিত মানসিকতা যে কাজে দেরী তারা সহ্য করতে পারে না। কিংবা সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতি অবহেলা কিংবা উদ্দেশ্যর প্রতি সন্দিগ্ধতাও তারা সইতে পারে না। সে হয়তো তাকে বলবার আগেই সবকিছুকে সোজাসাপটা একটা আকারে নিয়ে আসবে, এটা তার রুক্ষতা নয় বরং যেকোন ঝামেলাপূর্ণ অবস্খাকে পরিস্কার করে আনাটা তাদের স্বভাবেরই একটা অংশ। সে এমন একজন অতিথি যে গৃহিনীকে পার্টির পর সবকিছু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে দেয়ার ব্যাপারে আনন্দচিত্তে সাহায্য করবে। আবার সে এমন একজন অতিথি যে সহজেই বুঝে ফেলবে যে কফি টেবিলের উপর সতর্কতার সাথে মেলে রাখা স্যাটারডে রিভিউ পত্রিকাটি শুধুই একটা বাজে দাগ ঢাকবার উপলক্ষ্য মাত্র, এবং সোফার উপর সাজিয়ে রাখা কুশনগুলো সিগারেটে পোড়া জায়গাগুলো ঢাকবার জন্যেই।
তুলা জাতকদের মতো কন্যারাও তাদের নিজেদের স্বভাব এবং আচরণ সম্পর্কে মন্তব্য দ্রুত অস্বিকার করে ফেলে। প্রত্যক্ষতই সে নিজের দোষগুলোর ব্যাপারে অন্ধ, পরিস্কার আলোয় দেখতে পায় কিছুই যদিও তার চোখ এড়ায় না, কিন্তু তার নিজের দোষগুলো ঠিকই তার চোখ এড়িয়ে যায়। সত্যটা হলো সে ঠিকই তার দোষগুলো দেখতে পায়, কিন্তু সে সেই দোষগুলোকে এতই অসীমভাবে অবলোকন করে যে সেগুলোকে একটা সাধারণ সূত্রে কারোর কাছ থেকে নিতে সে প্রস্তুত নয়। কোন একজন কন্যা জাতককে বলে দেখুন যে সে সমালোচনাকারী, একজন দু:শ্চিন্তাকারী, খুতখুতে, অতি পরিস্কার কিংবা সে স্বাস্খ এবং আহার সম্পর্কে অস্বাভাবিক রকমের সতর্কতা অবলম্বনকারী। আপনি সরাসরি ‘না’ শুনবেন। এইসব গুণগুলো কার, তার? সে তো একেবারেই এমনটি নয়। আমার কাছে এখনও একজন কন্যাজাতক গৃহীনির একটি দশ পৃষ্ঠার চিঠি রয়েছে যেটাতে তার পরিচ্ছন্ন, সূক্ষ্ম হাতের লেখায় সতর্কভাবে প্রতিটি বিষয়ে বিষদ বিবরণের মাধ্যমে লেখা আছে যে কেন তার রাশিটি তার চরিত্রের সাথে মেলে না। কিন্তু একটি বারের জন্যেও সে বুঝতে পারে নি যে, খুবই সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্খাপন করা বিষদ চুলচেড়া অভিযোগগুলোই তাকে আরও বেশি কন্যা জাতক বলে উপস্খাপন করছিলো।
“আমি তো শুধুই পরিস্কার এমনটি নয়,” সে লিখেছিলো। “আমার বাড়িটা বরং খুবই নোংরা।” কিন্তু তারপর সে আবার লিখেছে, “কেননা, আমার দুটো খুব ছোট সন্তান রয়েছে, যারা সারাক্ষণ ঘর নোংরা করছে এবং আমাকে পাগল বানিয়ে দেয়। আমাকে তাদের পেছনেই প্রতিটা মুহূর্ত লেগে থাকতে হয়।” (এরপর সে তার সংসারের যতো খুটি নাটি কাজ আছে সেগুলোকে আলাদা আলাদা বর্ণনা করতে শুরু করে, একটা একটা করে এবং সতর্কভাবে।) “আমি সবকিছুকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখি, আমি আমার প্রতিবেশিদের মতো টিভি দেখে কিংবা বই পড়ে সময় নষ্ট করি না। কিন্তু তারপরও আমার স্বামী রাতে বাসায় ফিরতে ফিরতে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। আমার মতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কোন অধিকার তার নেই, কেননা সে যখন রাতে ঘুমিয়ে যায় তখনও আমি মাঝরাত পর্যন্ত কাজ করতে থাকি যাতে করে সকাল বেলায় একটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পাওয়া যায়। আমি অপরিচ্ছন্ন রান্নঘরে খাবার রাধতে পারি না। ধুলো ময়লা জীবাণুর জন্ম দেয়, এবং পরিবারের মধ্যে অসুস্খ্যতা ছড়ায়। কিন্তু পরদিন সকালে সে অফিসে যাবার আগেই সবকিছু আবার নোংরা হয়ে যায়। তাই কন্যাজাতকদের ব্যাপারে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে এই সূচিবোধের তালিকা আমাকে বিরক্ত করে। আমি মোটেও অতি পরিস্কার গোছের কিছু নই। এবং আমি মোটেও দু:শ্চিন্তাকারী কিংবা হাইপোকনড্রিয়াকও নই (সর্বক্ষণ দু:শ্চিন্তায় কাটাবার রোগও আমার নেই)। আমি আমার স্বামীর ভুলগুলো নিয়ে কখনও সমালোচনা করি না, অন্তত প্রায়ই এই কাজটা আমি করবো এমন নই - কেননা একজন স্ত্রীর এমন করা উচিত নয়... আমি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করি, কিন্তু আমার শিশুগুলোকে নিয়ে কি করবো বলুন? সত্যিই আপনি যদি একবার দেখতেন তারা কিভাবে ... করে...” এবং এই সব। (স্বভাবগতভাবেই সে সাবধানে তার নিজের ঠিকানা লিখে একটা স্ট্যাম্পড খাম তার চিঠির সাথে পাঠিয়ে দিয়েছে যাতে করে আমি তার চিঠির উত্তর জানাতে পারি।) তার চিঠির শেষ লাইনটিতে সে বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেছে, “আপনি কি বলতে পারেন আমার রাশির কোন বর্ণনাই আমার সাথে মেলে না?” আমি পরিকল্পনা করেছি যে, আমি এই চিঠির পৃষ্ঠাগুলো ফেন্সমে বাধিয়ে দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেবো, আর ফেন্সমের উপরে কন্যা রাশির প্রতিকটাও লাগিয়ে দেবো।
এক রুম ভর্তি সমস্যামুক্ত মানুষের ভীড়ে কন্যা জাতকদের আপনি সহজেই শনাক্ত করতে পারবেন। কোন একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে সে অসমর্থ। কিছুক্ষণ পর সে প্রত্যক্ষভাবেই অস্খির হয়ে উঠবে এবং উঠে দাড়িয়ে ঘরময় পায়চারী করতে শুরু করবে, নতুবা খেকশেয়ালের মতো লাফিয়ে উঠে চেয়ার বদল করবে, নতুবা এমন একটা অর্থহীন জরুরী অবস্খাকে আপনার সামনে তুলে ধরবে যেন অন্য কোথাও তার খুব জরুরী কোন এ্যাপোয়েন্টমেন্ট রয়েছে। কিন্তু একই সময়ে তার মুখাভিব্যক্তিটাতে থাকবে পরিচ্ছন্ন প্রশান্তি ঠিক মুখোশের মতোই। কন্যাদের স্নায়ুবিক তীব্রতা খুব কম সময়ই তার ভেতরের অনুভূতিকে পুরোপুরি প্রকাশ করে, কিন্তু সেটা যাই হোক তার পরিপাক প্রণালীতে এটা নিশ্চই একটা বিড়াট গন্ডগোল পাকিয়ে দেয়। এই কারণেই তাদেরকে আপনি সবসময়ই দেখবেন পাকস্খলির জন্যে পর্যাপ্ত ওষধ তারা ঠিকই বহন করছে।
এই পর্যায়ে এসে এখনও পর্যন্ত অদেখা গ্রহ ভলকানের নাম উল্লেখ করা উচিত বলে মনে হচ্ছে। ভলকানই হলো কন্যাদের প্রকৃত শাসনকর্তা, যেহেতু এর আবিস্কারটা খুবই আসন্ন বলে বলা হচ্ছে। কোন রাশির প্রকৃত শাসনকর্তা গ্রহের আবিষ্কারে সেই রাশির বৈশিষ্টগুলোতে পরিবর্তন আসে। একটা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, মকর এবং কুম্ভ রাশিগুলো যখন শনি গ্রহের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতো তখন যারা ফেব্রুয়ারীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেমন আব্রাহাম লিংকন, এর মধ্যে গ্রহটির বিষণíতার লক্ষণ ফুঁটে উঠতো। কিন্তু যখন মহাবিশ্বের নিজস্ব পরিকল্পনা মাফিক নির্দিষ্ট সময়ে ইউরেনাস (ইলেক্ট্রনিকস এবং শূন্যের প্রতিক, এবং কুম্ভের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক) আবিস্কৃত হলো - তখন কুম্ভ জাতকদের মধ্যে বিশ্রামহীন আবিস্কারের চেতনা এবং আরও বেশি গতিময়তা, অনির্দিষ্টতা, এবং অগ্রগতিশীলতাময় ব্যক্তিত্বের উন্মোচন ঘটে, যেমনটি ঘটেছিল ইউরেনাস নিয়ন্ত্রিত কুম্ভ ফন্সাংলিন ডি রুজভেল্ট এর মধ্যে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে বজ্রের প্রতিক গ্রহ ভলকানের অস্তিত্ব কয়েক বছরের মধ্যেই টেলিস্কোপের মধ্যে দিয়ে ধরা পড়বে। যতটুকু নিকটবর্তী হলে দেখা যাবে, পৃথিবীর ততটুকু কাছে ভলকান চলে আসার আগে বা পরে, যেসব কন্যা জাতকেরা এখন জীবিত কিংবা যারা ভবিষ্যতে জন্ম নেবে তারা বুধের প্রভাব থেকে মুক্ত হবে, ফলত তাদের মধ্যে বিরাজমান স্নায়বিক চাপটাও মুছে যাবে। আর বুধ বরং পার্থিব রাশি কন্যার থেকে বায়বীয় রাশি মিথুনের সাথেই বেশি সম্পৃক্ত। বজ্র প্রতিক ভলকান কন্যাদেরকে সাহস এবং আত্মবিশ্বাস যোগাবে এবং কন্যা জাতকদের মধ্যে মুখচোরা যেসব ব্যাপারগুলো আছে সেগুলো থেকেও মুক্তি দেবে। ভলকানের আবিস্কারের পর প্রাচীন ভবিষ্যতবাণি অনুযায়ী অন্য আর যে গ্রহটির অস্তিত্ব চিহ্নিত হওয়া বাকী থাকে সেটি হলো এ্যাপোলো, বৃষের প্রকৃত শাসনকর্তা। এর পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রক গ্রহের কম্পনের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি রাশির আচরণ নির্ধারিত হবে। বারোটি রাশির জন্যে থাকবে বারোটি স্বর্গীয় বস্তুপিন্ড। মজার ব্যাপার হলো গ্রীক মিথোলজিতে ভলকান হলো একজন খোড়া অথচ খুবই ক্ষীপ্র মস্তিষ্কের অধিকারী দেবতার নাম। অনেক কন্যা জাতকই সামান্য খুড়িয়ে চলে, নতুবা তাদের মধ্যে হাঁটবার বা দাড়াবার ব্যাপারে কোন অস্বাভাবিকতা রয়েছে।
প্রেমে পড়ে উন্মাদ কিংবা টাকা পয়সা হাতে থাকলে পাগলের মতো খরচ করবে এমন কন্যা জাতক আপনি কোথাও পাবেন না। দুটো ক্ষেত্রেই সাধারণত তারা বেশ বিচক্ষণ। তারা ভালোবাসার ক্ষেত্রে বেশ শান্ত এবং স্খীর, আর ভালোবাসার প্রকাশ তাদের মধ্যে ক্ষিণ, আর টাকা-পয়সা লেনদেন বা খরচের ক্ষেত্রেও সে ঠিক ততোটাই রক্ষণশীল। অদ্ভুত হলেও সত্য যে, কন্যারা যেমন অন্যদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে নিবেদিত প্রাণ তেমনি অন্যের থেকে সাহায্য গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা ঠিক বিপরীতভাবেই দু:শ্চিন্তাকারী এবং এটা তারা তীব্রভাবে ঘৃণা করে। তারা কোন ব্যাপারেই অন্য কারোর কাছে ঋণি হতে চায় না। এবং তারা নিজেদের উপর ছাড়া আর কারোর উপরই কোন ব্যাপারে নির্ভর করতে চায় না। তাদের ভেতরে দৃঢ় গেথে যাওয়া ভয় (যে বৃদ্ধ বয়সে তাদেরকে অন্যের উপর নির্ভর করতে হবে) -এর কারণে তারা এতোটাই সস্তা জীবন যাপন করে যে বলা যায় তারা কৃপণ। কিন্তু এই শব্দটা হয়তো একটু বেশিই কর্কশ হয়ে গেলো। যখন তাদের প্রচুর পরিমাণ নিরাপত্তা রয়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্যে দু:শ্চিন্তা করারও কোন ভয় নেই তখন কন্যা জাতকেরা হাত খুলে খরচ করে, কিন্তু তখনও তাদের মধ্যে ব্যয়িত অর্থের সমপরিমাণ সুবিধা অর্জনের ইচ্ছাটা প্রকটই থাকবে - নতুবা দোকানে জিনিস ফেরত দিয়ে টাকা ফেরত নিয়ে নেবে।
যদিও তার মধ্যে ভিখারী কিংবা ঘুড়ে ফিরে সময় অপচয়কারী যারা, তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই কিন্তু কোন বন্ধু বিপদে পড়লে সে নিশ্চিতভাবেই মহৎ হয়ে উঠবে। যেসব কন্যা জাতকেরা নিজের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদীর ব্যাপারে খুবই কৃপণ তারাও তাদের প্রিয় মানুষ বা ভালোবাসার মানুষ, কিংবা যারা তার কাছ থেকে পাবার মতো অধিকার রাখে তাদের বিপদে চমৎকারভাবে অর্থনৈতিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু তা সত্বেও কোন কন্যা জাতককে অযথা, কিংবা বেপড়োয়াভাবে টাকা খরচ করে বেড়াতে দেখবেন না, কেননা অপচয় তার চির অপ্রিয় একটা ব্যাপার। কন্যারা নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে পরিশ্রম করে, এবং অমিতব্যয়িতা কখনই তাদেরকে বিস্মিত করতে ব্যর্থ হয় না। যারা অমিতব্যয়ি এবং যারা অলস তাদের সম্পর্কে সাধারণত তাদের কিছু না কিছু বলার থাকে।
একটা ব্যাপার জানা থাকলে হয়তো কন্যাদের সমালোচনা করবার আচরণকে কিছুটা হলেও দমাতে সক্ষম হবে - সেটা হলো তারা যেমন আপনার ব্যাপারে সমালোচনাকারী, তেমনিভাবে তারা গোপনে নিজেদের ব্যাপারেও সমান সমালোচনাকারী। সে ভুলগুলো না দেখে পারেই না, কেননা সে জন্মই নিয়েছিলো ফুলদানিতে সূক্ষতম একটা দাগকেও চিহ্নিত করে দেবার জন্যেই। অপব্যায়ের মতোই কোন কাজে দেরী করাকেও সে সমান অপছন্দ করে। প্রকৃতপক্ষে দেরী করাটাও এক ধরনের অপচয়। এটা সময়ের অপচয়, এবং কন্যাদের কাছে সময় এমন একটা জিনিস যেটা দিয়ে আমাদের জীবন তৈরি হয়েছে। তাই সময় জ্ঞাণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন যদি তার কৃপণ কুটমন্তব্যগুলো থেকে বাঁচতে চান। ফন্সাংক সিনাটরার বন্ধু ঠিকই বুঝেছিলেন যে, যখন এই গায়কটি “আটটায় ডিনার” এর কথা বলে তখন ঠিক আটটার কথাই বলে, আটটা পনেরো কিংবা আটটা ত্রিশের কথা বলে না। যদিও সিনাট্রা একজন উষä এবং আগুণে ধনু রাশির জাতক কিন্তু তার মধ্যে কন্যা রাশির প্রভাব ছিল, অতএব এটা বোঝাই যাচ্ছে যে কেন সে রিহার্সিং করার ব্যাপারে এতোটা ভয়কাতুরে, এবং কেনই বা সঙ্গিতের প্রতিটি সূক্ষ্মতম বিষদই তাকে জানতে হবে।
প্রতিটি নোট এবং টোন একদম শুদ্ধ হতে হবে নয়তো যতক্ষণ না তার মন মতো হয় ততক্ষণ রেকর্ডিং পুন:পুন: চালিয়েই যেতে হবে। আর এতোটা সতর্ক, নির্ভুল রুচিবোধ, তাও আবার ধনুর অগ্নি এবং উষäতায়, আর তাছাড়া আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন কেন সে সঙ্গিত বিক্রি করতো। এটা বোঝা মুশকিল যে কেন কন্যা জাতকদেরকে মাঝে মাঝে সার্থপর বলে অপবাদ দেয়া হয়, কেননা তারা তো নিজেদের অভিলাষ থেকে অন্যের প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সার্থপর আখ্যাটা হয়তো কন্যাদের কোন ব্যাপারে ‘না’ বলা এবং সেটাকে সত্যই পালন করার বৈশিষ্ট্যের কারণে এসেছে। সে নিজের সময় এবং শক্তি দুটোই স্বাধীনভাবে ব্যয় করবে কিন্তু সেটা কোন যুক্তিযুক্ত সীমার বাইরে গিয়ে নয়। যখন চাহিদা অতিরিক্ত হয়ে যাবে, তখন কন্যারা পিছিয়ে যাবে এবং তার অভিযোগ পরিস্কারভাবে উপস্খাপন করবে, হয়তো একটু বেশিই পরিস্কারভাবে। যতোটা সে অন্যের ভুল ধরতে পছন্দ করে ঠিক ততোটাই তীব্রভাবে ঘৃণা করে যে তার ভুলের কেউ সমালোচনা করুক। যদিও কন্যা জাতকেরা কদাচিৎ ভুল করে, তবু যদি করে, তাহলে খুব কৌশলে তার ভুল সম্পর্কে তাকে বলুন যদি আপনি তার সাথে বন্ধুত্ব রাখতে চান।
ওষধের দোকানে বারং বার ভ্রমণ সত্বেও কন্যা জাতকেরা বিস্ময়করভাবে সু সাস্খের অধিকারী (যদি না তারা কোন অসুস্খ্যতার দু:শ্চিন্তা করে, মানসিক অশান্তিতে না ভুগে আর নেতিবাচকতায় না ভুগে।) তারা তাদের শরীরের ভালো যত্ন নেয় এবং তারা তাদের খাবার দাবারের ব্যাপারে খুত খুতে। তারপরও, তারা হয়তো ছোট খাট অসুস্খতার কথা অভিযোগের সূরে বলবে, যেমন, পেট খারাপ, বদহজম, পাকতন্ত্রে দীর্ঘস্খায়ী ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং পায়ের সমস্যা (ভলকানের কথা মনে আছে, সেই খোড়া দেবতা?) বুকে কফ জমলে নিজেদের যত্ন নেয়া উচিত তাদের, কেননা জন্মকুষ্ঠিতে ভিন্ন ভিন্ন গ্রহের প্রভাব থাকলে ফুসফুসের অসুস্খ্যতার কাছে তারা দূর্বলভাবে ধরা দেয়। নিতম্বে, হাতে, কাধে, গাটের ব্যথা, আর্থরিটিস, এবং রিউমিটিক সমস্যা দেখা দিতে পাওে এবং মাঝে মধ্যে লিভারে কিংবা পিঠে ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু যেসব কন্যারা তাদের সাস্খ্যের যত্ন নেবে, তারা অনেক মারাত্মক রোগ বালাই থেকে মুক্ত থাকবে। কন্যা জাতকদের অধিকাংশই আবার সবজীভোজী। যদি সেটা না হয়, আপনি বাজী ধরতে পারেন তারা নিশ্চিতভাবে জানবে কোন জিনিসটা তাদের খাওয়া উচিত এবং সেটা কিভাবে রাধতে হবে। আগে বা পড়ে আপনি হয়তো একজন জীবাণু সচেতন কন্যা জাতকের সাথে মিলিত হবেন, যে রাবার গ্লাভস পড়ে মাংস ধরে এবং নিজের টুথব্রাশ প্রতিদিন গরম পানি দিয়ে পরিস্কার করে, কিন্তু অবশ্যই এটা চরম একটা ক্ষেত্র। তথাস্তু, যারা কন্যা রাশির সাধারণ বৈশিষ্টের অধিকারী তারাও খাবার আগে নিজের হাতটা উপূর্যপরী পরিস্কার করে নেবে।
কন্যারা বেড়াল, পাখি এবং ছোট, অসহায় জীব-যন্তু ভালোবাসে। তারা সত্যকেও ভালোবাসে, ভালোবাসে সময়ানুবর্তিতা, মিতব্যয়িতা, বিচক্ষণতা, এবং সাতন্ত্র পছন্দবোধ। তারা ঘৃণা করে লোক দেখানো আবেগ, ধুলা, অশ্লীলতা, অলসতা, এবং শুয়ে বসে কাটানো। তাদের স্বভাব খুবই বাস্তববুদ্ধি সম্পন্ন, তাদের মধ্যে চরম মাত্রায় বৈষম্য লক্ষ্য করা যায় - তারাই সত্যিকার সাতন্ত্রবাদী, তাদের আগ্রহী উপলব্ধি তাদের আকাংঙ্খাকে বাজে এবং বেদনাদায়ক ভাবনার সাথে যুক্ত করে না। কন্যাজাতকদের স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে একটা সুবাতাস প্রবাহীত হয় যেটা তাদেরকে বন্য এবং কাল্পনিক স্বপ্ন বা প্রত্যাশা থেকে মুক্ত রাখে। জীবনের বিষদ ব্যাপারগুলো তার উপর এসে চেপে বসবার আগেই যদি সে সেগুলোর দখলটা নিতে সক্ষম হয় তাহলে অন্যান্য রাশির আর সবার থেকেই জীবনে সফলতা লাভের সম্ভাবনা তার বেশি।
ঠান্ডা সবুজ জেড এবং খাঁটি প্লাটিনাম তার জন্যে সৌভাগ্য বয়ে আনে। কিন্তু কন্যা জাতকদের সৌভাগ্য সবসময়ই পাঁচধরনের একাকিত্ববোধের মুখোমুখি হয়ে তবেই আসে। এবং দায়িত্বের অবিরাম ডাক কখনই এই ভদ্র হৃদয়গুলোতে স্তব্ধ হয় না। ভুলে যাবেন না যে এই লাজুক, বিষাদগ্রস্ত কন্যারা সবসময়ই একটা দুটো বিষয় গোপনে পুষে রাখে। যতই সে তার প্রিয় ধূসর, ক্রিম রঙ, নেভী ব্লু কিংবা সবুজের যে কোন রঙ এবং দুধ শাদা পোশাকে সজ্জিত হোক না কেন তার শান্ত রক্তে সবসময়ই বুধের অস্খির প্রকৃতি এবং ভলকানের দূরবর্তী বজ্র ঠিকই নেচে বেড়াচ্ছে। তার গম্ভীর প্রতিকৃতির মধ্যে তরুনীদের সৌন্দর্যের আকর্ষণটাও রয়েছে - চিন্তা এবং কাজে খাটি হওয়াটাই কন্যা রাশির মূলভিত্তিকে উপস্খাপন করে। একবার এই ইস্টারের ফুলকে জানতে পারলে তার মোহ থেকে মুক্ত হওয়া আপনার জন্যে কঠিন হযে উঠবে। প্রতিটি বসন্তেই আপনার স্মৃতিতে এসে কড়া নাড়বে তার মুখ। আপনার হৃদয়ে নিজের জায়গা করে নেবার জন্যে কন্যাদের নিজস্ব একটা পথ আছে।
বিবাহিতই হোক কিংবা হোক ব্যাচেলর কন্যা জাতককে অনেকের মধ্যে শনাক্ত করে নেয়াটা নেহাতই সহজ। তার একটা কারণ হলো কন্যা জাতকেরা নিশ্চুপ থাকতে পছন্দ করে। অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলার মানুষও সে নয়, বরং সে একাকী এক কোণায় স্খান নিয়েই সস্তি বোধ করে। সমার্থক শব্দের ডিকশনারী বগলে গুজে এক কোণে দাড়ানো আকর্ষণীয় ব্যক্তিটাকে কি লক্ষ্য করেছেন? যার মনটা ঘড়ির কাটার মতোই সার্বক্ষণিক কর্মরত এবং প্রতিটি মুহূর্তেই সূক্ষ্মতম ব্যাপারটিও যার নজর এড়াচ্ছে না? আপনি যদি তাকে কাছ থেকে অবলোকন করেন তাহলে দেখবেন যে প্রতিটি মিনিটই সে পরিপূর্ণ পর্যবেক্ষণের সাথে অতিবাহন করছে। সে একজন কন্যা জাতক। বাস আসবার অপেক্ষা করছে যে শান্ত মেয়েটি তাকে লক্ষ্য করেছেন? তার চোখগুলো নম্র এবং সুন্দর। তার হাতের পরিস্কার শুভ্র গ্লোভগুলো লক্ষ্য করেছেন, কিংবা তার শান্ত ব্যবহার? বাস ভাড়া দেবার জন্যে যা টাকা লাগে ঠিক সে পরিমান টাকা তার হাতের মুঠোও লুকানো রয়েছে। ৫ ডলারের নোটের খুচড়ো আছে কি না সে প্রশ্ন বাস ড্রাইভারকে করার কোন আহ্লাদ তার মধ্যে নেই। সে একজন কন্যা জাতিকা।
আপনি যদি পূর্ণ নৈতিক শুদ্ধতা অর্জনে আগ্রহী এইসব মানুষগুলোকে খোঁজাখুঁজি করেন তো সামাজিক সমাবেশে যাবার দরকার নেই। কোন ককটেইল পার্টিতে অতি সামাজিক ব্যক্তিত্বের ভূমিকায় অবতির্ন হবার পরিবর্তে সে বরং তার অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকবে রাত পর্যন্ত। কন্যা জাতকেরা জন্ম থেকেই একটি প্রবৃত্তি পেয়েছে যে তারা জনবহুলতা পছন্দ করে না, আর তাই তারা পরোয়াহীন সামাজিক মেলামেশায় তেমন সাচ্ছন্দবোধ করে না। অনেক সময় তারা হতাশাগ্রস্খভাবে পার্টিতে যোগ দেয়, কিন্তু তাদের দায়িত্ব সবসময়ই কাছে টানে যে খুব একটা ছেলেমানুষিতে তারা মেতে উঠতে সক্ষম হয় না। কখনও কখনও কন্যা জাতকেরা মকরদেরকেও পার্টিতে ভোলাভালা নবজাতকের মতো ম্লান করে তুলতে পারে, তবে সে পর্যায়ে যেতে তাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। বাতাসে প্রাসাদ গড়তে কিংবা কাঠালের আমসত্ব বানিয়ে খাওয়াবার স্বভাব তার মধ্যে নাই। দিবাস্বপ্ন দেখবার মতো সময় কন্যাদের নেই, এবং পতিত তারাকে দিয়ে সুপ্ত ইচ্ছা পোষণ করবার ক্ষেত্রে সে খুবই ক্লান্ত। কন্যা জাতককে দেখে আপনার মনে তার সম্বন্ধে যে ধারণাটা প্রথমে উদ্ভব হবে সেটা হলো সে কোন একটা বিশেষ সমস্যায় আছে এবং সমস্যাটার সমাধানের জন্যে চেষ্টা করছে - কিংবা একটা অর্থহীন অনুভবের জন্ম দেবে যে সে গোপনে কোন কিছু নিয়ে দু:শ্চিন্তা করছে। সম্ভবত সত্যিই সে করছে। কন্যাদের মনে প্রাকৃতিকভাবেই দু:শ্চিন্তা চলে আসে।
কেউ হয়তো বলবে যে, দু:শ্চিন্তা করাটা তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারটা বিমূর্ত এবং ধরা-ছোয়া যায় না, কিন্তু তার আনন্দদায়ক হাসিটা সবসময়ই তার ভেতরের বড় সমস্যাগুলোকে গোপন করতে সক্ষম।যদিও জন্মকুষ্ঠিতে অন্যান্য গ্রহের প্রভাব জনাব মোখলেছ উদ্দিনের স্বভাবকে কন্যা জাতকের সাধারণ স্বভাব বৈশিষ্ট থেকে পৃথক করে তুলতে সক্ষম, সেক্ষেত্রে সাধারণভাবে আপনি বরং নম্র, এবং সাধারণত মায়াময় এবং শান্ত দুটো চোখ খুঁজে দেখতে পারেন। কন্যাদের চোখদুটো এতই পরিস্কার যে আপনি তার চোখে নিজের প্রতিচ্ছবি সেখানে দেখতে পাবেন।
সে চোখগুলোতে বুদ্ধিমত্তা আর চিন্তা-ভাবনার স্বচ্ছতা ঝলমল করে। তাদের অভিব্যক্তিতে এমন একটা প্রশান্ত ব্যাপার আছে যে সেটা তার নিজের ভেতরের গোপন দু:শ্চিন্তাগুলোকে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম। তাদের অধিকাংশই অত্যন্ত আকর্ষণীয়, তাদের নাক তীক্ষ, কান, ঠোঁট সুন্দর। নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে সৌন্দর্যের কিংবা আকর্ষণের কোন অভাব নেই, কিন্তু কিছু কিছু খারাপ মুহূর্তে তাদের আত্মঅহংকারের ছটা এসে লাগতে পারে। কন্যারা তাদের ফটোগ্রাফের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত মনোভাব পোষণ করে, এবং নিজেদের চেহারা নিয়েও তারা চরম খুতখুতে, সেটা বাস্তবেই হোক কিংবা হোক ছবির জগতে। আপনি যদি পর্যবেক্ষণকারী হয়ে থাকেন তো নিশ্চই দেখেছেন আয়নার সামনে দাড়িয়ে যখন তারা ভাবে আশে পাশে কেউ নেই তখন তারা কেমন খুৎখুৎ করে। তারা সবসময়ই পরিপাটি পোশাক পড়ে, সাধারণত খুবই খুতখুতে, রক্ষণশীল বললেও বেশি বলা হয় না। কন্যা জাতক মরিস শেভালিয়ে বরং গান ছাড়া ধরা পড়াকেই শ্রেয় মনে করতেন কিন্তু তার শার্টে টাই থাকবে না এটা ভাবতে পারতেন না।
কন্যা জাতকেরা সাধারণত ছোটখাট মানুষ, নিশ্চিতভাবেই দৈত্য দানোর মতো নয়, কিন্তু সে পুরুষালী, এবং তার ভঙ্গুর চেহারাটা যে ধারণা দেয় তার থেকে বরং অনেক বেশি শক্তির অধিকারী। এই রাশির মানুষগুলো বরং অন্যান্য পুরুশালী রাশির মানুষগুলোর থেকে অনেক বেশি সময় ধরে তীব্র কাজের চাপ সহ্য করে থাকতে পারে - অবশ্য যদি সেই চাপে তাদের নার্ভাস ব্রেকডাওন না ঘটে তবেই। যদিও তারা খুবই সমর্থ এবং ঠান্ডা প্রকৃতির কিন্তু তাদের ভেতরের দু:শ্চিন্তা তাদেরকে মলিন করে দেয় এবং এর ফলে পরিপাক এবং আবেগের সমতাটা নষ্ট হয়। যতটুকু কাজ তারা নিরাপদে করতে সক্ষম তার থেকে বেশি করে দায়িত্ব শেষ করতে গিয়ে নিজেদের ভেঙ্গে পড়বার মতো অবস্খায় পতিত হওয়াটাই বরং দূর্বল স্নায়ুযুক্ত কন্যা জাতকদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে। যদি তাদের মস্তিষ্কে কোন চাপ না পড়ে তবে তারা তাদের সুচারু এবং সুদক্ষ কর্মক্ষমতা নিয়ে বেশ শান্তভাবেই কাজ সমাধা করতে সক্ষম।
কন্যারা প্রশ্নাতীতভাবে নির্ভরযোগ্য এবং দায়িত্বপরায়ণ। বলা বাহুল্য, কোথাও তাদের যেতে ইচ্ছে না হলে তারা অসুস্খতার ভানও করতে সক্ষম। এই সময় কন্যাসুলভ অভিনয়ের প্রতিভাটাও তার কাজে আসে। কখনও কখনও তারা নিজেদের মধ্যে একটা কাল্পনিক অসুস্খতাকেও জন্ম দেয়, কিন্তু তাদের শান্ত চোখ এবং বুধ-শাসিত ঠান্ডা মস্তিষ্ক তাদের এধরনের কপট চিন্তাগুলোকে ক্ষণস্খায়ী করে তোলে। তারা রূপচর্চা, খাওয়াদাওয়া, কাজকর্ম এবং প্রণয়ের ব্যাপারে খুতখুতে। আপনার কন্যা জাতক বন্ধু, যাকে দেখলে মনে হয় যে সে এই মাত্র গোসল করে এসেছে, প্রকৃতই সে হয়তো সেটা করেছে। আপনার যে কোন চারজন বন্ধু একদিনে মোট যতবার গোসল করে তার থেকেও বেশি গোসল করে আপনার কন্যা জাতক বন্ধুটি।
স্বাস্খ্য সম্পর্কে তার নির্ভূল ধারণা রয়েছে, অলসতার ব্যাপারে তার ধৈর্য্য কম এবং জীবন ও মানুষ সম্পর্কে ঘোর মগ্ন হয়ে থাকার স্বভাবটা তার মধ্যে নেই, এমনকি প্রণয়ে পড়েও নয়। কন্যা জাতক সে নারীই হোক কিংবা পুরুষ, প্রণয়ের মেঘ তার চোখে কখনই এমন পর্দা দিয়ে দেয় না যে সে তাদের সম্পর্কের কুফল কিংবা প্রিয় মানুষটির দোষ ত্রুটি দেখতে অক্ষম হয়ে উঠবে। আজকের দিনের প্রবাদটি ব্যবহার করলে বলতে হয় কন্যারা জানে, “কোথায় এটা রয়েছে,” যদিও গালি-গালাজ অপছন্দকারী কন্যা জাতকেরা হয়তো এই প্রবাদটি শুনে ঘৃণায় মুখ কুচকাবেন। অবশ্য অগাস্টেও শেষে কিংবা সেপ্টেম্বরে জন্ম নেয়া সবাই যে খুতখুতে, ছেবলামিপূর্ণ এবং ঘাড়তেড়া গোছের হবে এমনটি ভাববার অবকাশ নেই। অনেক কন্যা জাতকই বুধের বিচক্ষণতা পায় - যদি আপনি তাদের পাশকাটা মন্তব্যগুলো শুনে থাকেন - এবং তারা বুধসুলভ আকর্ষনীয় একটা আলো ছড়ায়, যেটা উপেক্ষা করা কঠিন। আর এই ক্ষেত্রে সোফিয়া লরেনের উদাহরণটা নিশ্চয়ই সব বিতর্কের অবসান করে দেবে। আপনার হয়তো এমন কোন কন্যা জাতকের সাথে দেখা হবে যে তার মানসিক দিকগুলো ঠিকঠাক রাখতে গিয়ে নিজের চারপাশটার দিকে খুব একটা নজর দিতে পারে নি, অবশ্য কোন একটা অবসরে। তাই বলে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেন না। আগে হোক পরে হোক দেখবেন সে ঠিকই কার্পেটে পড়ে থাকা পিনটা সে উঠিয়ে ফেলে দেবে, তার চুল আচড়াবে এবং নিজের কাধের উপর থেকে ছেড়া সূতোটা টেনে সরিয়ে দেবে। যদিও কন্যা জাতকেরা কদাচিৎ দু একটা অসম্ভব স্বপ্ন দেখতেও পারে, কিন্তু প্রায়ই তাদেরকে দেখা যায় যে তারা সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন মনে পুষে রাখে, যদিও তাদের যুক্তিবাদী মনে ঠিকই তারা জানে যে, হয়তো সেগুলো শুধু স্বপ্নই। অর্থাৎ তারা নিজেরাই সন্দেহ পোষণ করে যে স্বপ্নগুলো হয়তো বাস্তব রূপ পাবে না।
অশ্লীলতা, বোকামী কিংবা উগ্র আচরণে যখন কন্যা জাতকেরা বিরক্ত হয়ে ওঠে তখন হঠাৎ করেই তারা বদমেজাজী হয়ে ওঠে, অধৈর্য হয়ে পড়ে, বকাঝকা করতে থাকে এবং ভীত হয়ে ওঠে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই তারা ভদ্র মানুষ, তাদের সঙ্গ বেশ চমৎকার, বিশেষ করে রোগীদের শয্যার পাশে। সবচে সুখ্যাত নার্সদের কয়েকজন এই কন্যা রাশিরই জাতক ছিলেন, কেননা তাদের রয়েছে সহানুভূতি জানাবার দক্ষতা এবং মানুষকে খুশি করবার সামর্থ। আপনার মাথা ব্যথা হলে আপনার কন্যা জাতক বন্ধুটিই হয়তো দৌড়ে ডাক্তার খানায় গিয়ে আপনার ওষুধ নিয়ে আসবে। কিন্তু আপনি যদি তার অবস্খানে থাকেন তবে আপনাকে আর দৌড়ে ডাক্তার খানায় যেতে হবে না, কেননা একটা ছোটখাট ডাক্তারখানা সে তার বাসাতেই গড়ে তুলেছে। তার বাথরুমের ওষুধের ক্যাবিনেটটা সাধারণত পেট ব্যথার ওষুধ দিয়ে ভরা, কিংবা, আমাষা কিংবা হজমের সমস্যাজনিত যেকোন ওষধ তার কাছে থাকবে। সময় পেলে একবার উকি দিয়ে দেখুন। ওষধ কি দিয়ে তৈরি হচ্ছে সেগুলোর প্রত্যেকটি সম্পর্কে প্রচ্ছন্ন ধারণা না নিয়ে সে ওষধ সেবন কওে না, তাই আপনার মাথা ব্যথা কেন হলো সে ব্যাপারটি বিবেচনায় রেখে কোন ওষধটি আপনার সবচে বেশি প্রযোয্য সেটা সে সুন্দর ভাবে আপনাকে জানিয়ে দিতে পারবে।
যসব কন্যা জাতকেরা প্রায়ই ভ্রমণ করে তারা তাদের বহনযোগ্য ওষধের বাক্সটা সাথেই রাখে। শুধু কিছু পিল, এবং সিরাপের বোতলের জন্যে প্রয়োজনে তারা একটা অতিরিক্ত স্যুটকেইসও বহন করতে রাজি। যদি তারা কোন একটা বিশেষ সাবান কিংবা লোশন ব্যবহার করে অভ্যস্ত হয় তবে তারা সেটাও সেই স্যুটকেইসে ঢুকিয়ে দেবে। যদি এমন কোন শহরে গিয়ে তারা আটকে পড়ে যেখানে তাদের প্রিয় প্রসাধন, কিংবা ওষধটি পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে সত্যিই এটা তাদেরকে এক বিড়াট সমস্যায় ফেলে দেয়। সাধারণত সে সাবান কিংবা শ্যাম্পু এক কেইস ধরে কেনে, কেননা তাতে করে সস্তায় পাওয়া যায় - নতুবা একসাথে এক ডজন কেনে, যেটা একটা কারণ যে সে ভ্রমণের মাঝখানে কোন কিছু কিনতে আগ্রহী নয়।
কখনও কখনও কন্যা জাতকেরা নিজেদের পানি নিজেরাই বহন করে। হাসবেন না ু আপনি কি জানেন পানির মধ্যে বিদেশী পদার্থ যেগুলো থাকে সেগুলো আপনার পরিপাকে কি সমস্যা ঘটাতে পারে। এর উত্তর পাবেন কন্যাদের কাছ থেকে। যখন এই মানুষগুলো কোন স্বভাব গঠন করে, তখন প্রকৃতই তাদের সেই স্বভাবটা গঠিত হয়, আর ভ্রমণের সময় স্বভাবটাকে বিসর্জন দেয়া যায় এই মনোভাব তাদের নয়। যদি তার স্বভাব হয় যে সে তার মোজা বাম পাশের মাঝের ড্রয়ারটাতে রাখবে তাহলে ভ্রমনে বের হয়ে কোন হোটেলের কামড়ায় ওয়্যার ড্রোবে তেমন ড্রয়ার না থাকলে বিপদেরই কথা। তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেবে। হয়তো সে মোজাগুলোকে অবশেষে তার স্যুটকেইসেই রেখে দেবে। কিন্তু তার ঘুমটা ঠিকমতো হবে না। পরের দিন সকালে হোটেলের ওয়েট্রেস ঠিকই বুঝে নেবে যে যখন কন্যা জাতক তিন মিনিট পরে নাস্তা আনতে বলবে, তখন সে ঠিক তিন মিনিটই বোঝাচ্ছে কম বা বেশি নয়। কিংবা যখন সে বলবে চাদরের উজ্জ্বল দিকটা উপরে হবে তখন সেটাই সে বলেছে, উজ্জ্বল দিকটা নিচে নয়। আর যখন ওয়েট্রেস তার কথার সূক্ষ্ম দিকগুলো মনে রেখে কাজ করবে তখন তাকে বড় একটা বখশিস দিতে সে কুন্ঠা করবে না।
একজন কন্যা জাতক আপনার মন্তব্যকে চুলচেড়া যুক্তি তর্ক দিয়ে সমালোচনা করবে, যেটা আপনাকে রাগিয়ে তুলতে পারে, কিন্তু আপনি যদি তর্কে আটকে যান, তাহলে সে আপনার কথাগুলোকে দ্রুত পুনোরুদ্ধার করতেও এগিয়ে আসবে, এবং সেক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্যটা উপকার ব্যতিত মোটেও অন্য কিছু নয়। যদি আপনার কাজ আপনাকে সূক্ষ্ম বিষয়গুলোর প্রতি বিরক্ত করে তোলে তো কন্যাজাতক বন্ধুটি তার হাতা গুটিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে লেগে যাবে। এটা কন্যাদের আত্মগরিমা নয় যে তারা তাদের কাজ দিয়ে আপনাকে দেখাতে চায়। এটা হলো বুধের শাসিত মানসিকতা যে কাজে দেরী তারা সহ্য করতে পারে না। কিংবা সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতি অবহেলা কিংবা উদ্দেশ্যর প্রতি সন্দিগ্ধতাও তারা সইতে পারে না। সে হয়তো তাকে বলবার আগেই সবকিছুকে সোজাসাপটা একটা আকারে নিয়ে আসবে, এটা তার রুক্ষতা নয় বরং যেকোন ঝামেলাপূর্ণ অবস্খাকে পরিস্কার করে আনাটা তাদের স্বভাবেরই একটা অংশ। সে এমন একজন অতিথি যে গৃহিনীকে পার্টির পর সবকিছু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে দেয়ার ব্যাপারে আনন্দচিত্তে সাহায্য করবে। আবার সে এমন একজন অতিথি যে সহজেই বুঝে ফেলবে যে কফি টেবিলের উপর সতর্কতার সাথে মেলে রাখা স্যাটারডে রিভিউ পত্রিকাটি শুধুই একটা বাজে দাগ ঢাকবার উপলক্ষ্য মাত্র, এবং সোফার উপর সাজিয়ে রাখা কুশনগুলো সিগারেটে পোড়া জায়গাগুলো ঢাকবার জন্যেই।
তুলা জাতকদের মতো কন্যারাও তাদের নিজেদের স্বভাব এবং আচরণ সম্পর্কে মন্তব্য দ্রুত অস্বিকার করে ফেলে। প্রত্যক্ষতই সে নিজের দোষগুলোর ব্যাপারে অন্ধ, পরিস্কার আলোয় দেখতে পায় কিছুই যদিও তার চোখ এড়ায় না, কিন্তু তার নিজের দোষগুলো ঠিকই তার চোখ এড়িয়ে যায়। সত্যটা হলো সে ঠিকই তার দোষগুলো দেখতে পায়, কিন্তু সে সেই দোষগুলোকে এতই অসীমভাবে অবলোকন করে যে সেগুলোকে একটা সাধারণ সূত্রে কারোর কাছ থেকে নিতে সে প্রস্তুত নয়। কোন একজন কন্যা জাতককে বলে দেখুন যে সে সমালোচনাকারী, একজন দু:শ্চিন্তাকারী, খুতখুতে, অতি পরিস্কার কিংবা সে স্বাস্খ এবং আহার সম্পর্কে অস্বাভাবিক রকমের সতর্কতা অবলম্বনকারী। আপনি সরাসরি ‘না’ শুনবেন। এইসব গুণগুলো কার, তার? সে তো একেবারেই এমনটি নয়। আমার কাছে এখনও একজন কন্যাজাতক গৃহীনির একটি দশ পৃষ্ঠার চিঠি রয়েছে যেটাতে তার পরিচ্ছন্ন, সূক্ষ্ম হাতের লেখায় সতর্কভাবে প্রতিটি বিষয়ে বিষদ বিবরণের মাধ্যমে লেখা আছে যে কেন তার রাশিটি তার চরিত্রের সাথে মেলে না। কিন্তু একটি বারের জন্যেও সে বুঝতে পারে নি যে, খুবই সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্খাপন করা বিষদ চুলচেড়া অভিযোগগুলোই তাকে আরও বেশি কন্যা জাতক বলে উপস্খাপন করছিলো।
“আমি তো শুধুই পরিস্কার এমনটি নয়,” সে লিখেছিলো। “আমার বাড়িটা বরং খুবই নোংরা।” কিন্তু তারপর সে আবার লিখেছে, “কেননা, আমার দুটো খুব ছোট সন্তান রয়েছে, যারা সারাক্ষণ ঘর নোংরা করছে এবং আমাকে পাগল বানিয়ে দেয়। আমাকে তাদের পেছনেই প্রতিটা মুহূর্ত লেগে থাকতে হয়।” (এরপর সে তার সংসারের যতো খুটি নাটি কাজ আছে সেগুলোকে আলাদা আলাদা বর্ণনা করতে শুরু করে, একটা একটা করে এবং সতর্কভাবে।) “আমি সবকিছুকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখি, আমি আমার প্রতিবেশিদের মতো টিভি দেখে কিংবা বই পড়ে সময় নষ্ট করি না। কিন্তু তারপরও আমার স্বামী রাতে বাসায় ফিরতে ফিরতে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। আমার মতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কোন অধিকার তার নেই, কেননা সে যখন রাতে ঘুমিয়ে যায় তখনও আমি মাঝরাত পর্যন্ত কাজ করতে থাকি যাতে করে সকাল বেলায় একটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পাওয়া যায়। আমি অপরিচ্ছন্ন রান্নঘরে খাবার রাধতে পারি না। ধুলো ময়লা জীবাণুর জন্ম দেয়, এবং পরিবারের মধ্যে অসুস্খ্যতা ছড়ায়। কিন্তু পরদিন সকালে সে অফিসে যাবার আগেই সবকিছু আবার নোংরা হয়ে যায়। তাই কন্যাজাতকদের ব্যাপারে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে এই সূচিবোধের তালিকা আমাকে বিরক্ত করে। আমি মোটেও অতি পরিস্কার গোছের কিছু নই। এবং আমি মোটেও দু:শ্চিন্তাকারী কিংবা হাইপোকনড্রিয়াকও নই (সর্বক্ষণ দু:শ্চিন্তায় কাটাবার রোগও আমার নেই)। আমি আমার স্বামীর ভুলগুলো নিয়ে কখনও সমালোচনা করি না, অন্তত প্রায়ই এই কাজটা আমি করবো এমন নই - কেননা একজন স্ত্রীর এমন করা উচিত নয়... আমি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করি, কিন্তু আমার শিশুগুলোকে নিয়ে কি করবো বলুন? সত্যিই আপনি যদি একবার দেখতেন তারা কিভাবে ... করে...” এবং এই সব। (স্বভাবগতভাবেই সে সাবধানে তার নিজের ঠিকানা লিখে একটা স্ট্যাম্পড খাম তার চিঠির সাথে পাঠিয়ে দিয়েছে যাতে করে আমি তার চিঠির উত্তর জানাতে পারি।) তার চিঠির শেষ লাইনটিতে সে বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেছে, “আপনি কি বলতে পারেন আমার রাশির কোন বর্ণনাই আমার সাথে মেলে না?” আমি পরিকল্পনা করেছি যে, আমি এই চিঠির পৃষ্ঠাগুলো ফেন্সমে বাধিয়ে দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেবো, আর ফেন্সমের উপরে কন্যা রাশির প্রতিকটাও লাগিয়ে দেবো।
এক রুম ভর্তি সমস্যামুক্ত মানুষের ভীড়ে কন্যা জাতকদের আপনি সহজেই শনাক্ত করতে পারবেন। কোন একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে সে অসমর্থ। কিছুক্ষণ পর সে প্রত্যক্ষভাবেই অস্খির হয়ে উঠবে এবং উঠে দাড়িয়ে ঘরময় পায়চারী করতে শুরু করবে, নতুবা খেকশেয়ালের মতো লাফিয়ে উঠে চেয়ার বদল করবে, নতুবা এমন একটা অর্থহীন জরুরী অবস্খাকে আপনার সামনে তুলে ধরবে যেন অন্য কোথাও তার খুব জরুরী কোন এ্যাপোয়েন্টমেন্ট রয়েছে। কিন্তু একই সময়ে তার মুখাভিব্যক্তিটাতে থাকবে পরিচ্ছন্ন প্রশান্তি ঠিক মুখোশের মতোই। কন্যাদের স্নায়ুবিক তীব্রতা খুব কম সময়ই তার ভেতরের অনুভূতিকে পুরোপুরি প্রকাশ করে, কিন্তু সেটা যাই হোক তার পরিপাক প্রণালীতে এটা নিশ্চই একটা বিড়াট গন্ডগোল পাকিয়ে দেয়। এই কারণেই তাদেরকে আপনি সবসময়ই দেখবেন পাকস্খলির জন্যে পর্যাপ্ত ওষধ তারা ঠিকই বহন করছে।
এই পর্যায়ে এসে এখনও পর্যন্ত অদেখা গ্রহ ভলকানের নাম উল্লেখ করা উচিত বলে মনে হচ্ছে। ভলকানই হলো কন্যাদের প্রকৃত শাসনকর্তা, যেহেতু এর আবিস্কারটা খুবই আসন্ন বলে বলা হচ্ছে। কোন রাশির প্রকৃত শাসনকর্তা গ্রহের আবিষ্কারে সেই রাশির বৈশিষ্টগুলোতে পরিবর্তন আসে। একটা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, মকর এবং কুম্ভ রাশিগুলো যখন শনি গ্রহের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতো তখন যারা ফেব্রুয়ারীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেমন আব্রাহাম লিংকন, এর মধ্যে গ্রহটির বিষণíতার লক্ষণ ফুঁটে উঠতো। কিন্তু যখন মহাবিশ্বের নিজস্ব পরিকল্পনা মাফিক নির্দিষ্ট সময়ে ইউরেনাস (ইলেক্ট্রনিকস এবং শূন্যের প্রতিক, এবং কুম্ভের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক) আবিস্কৃত হলো - তখন কুম্ভ জাতকদের মধ্যে বিশ্রামহীন আবিস্কারের চেতনা এবং আরও বেশি গতিময়তা, অনির্দিষ্টতা, এবং অগ্রগতিশীলতাময় ব্যক্তিত্বের উন্মোচন ঘটে, যেমনটি ঘটেছিল ইউরেনাস নিয়ন্ত্রিত কুম্ভ ফন্সাংলিন ডি রুজভেল্ট এর মধ্যে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে বজ্রের প্রতিক গ্রহ ভলকানের অস্তিত্ব কয়েক বছরের মধ্যেই টেলিস্কোপের মধ্যে দিয়ে ধরা পড়বে। যতটুকু নিকটবর্তী হলে দেখা যাবে, পৃথিবীর ততটুকু কাছে ভলকান চলে আসার আগে বা পরে, যেসব কন্যা জাতকেরা এখন জীবিত কিংবা যারা ভবিষ্যতে জন্ম নেবে তারা বুধের প্রভাব থেকে মুক্ত হবে, ফলত তাদের মধ্যে বিরাজমান স্নায়বিক চাপটাও মুছে যাবে। আর বুধ বরং পার্থিব রাশি কন্যার থেকে বায়বীয় রাশি মিথুনের সাথেই বেশি সম্পৃক্ত। বজ্র প্রতিক ভলকান কন্যাদেরকে সাহস এবং আত্মবিশ্বাস যোগাবে এবং কন্যা জাতকদের মধ্যে মুখচোরা যেসব ব্যাপারগুলো আছে সেগুলো থেকেও মুক্তি দেবে। ভলকানের আবিস্কারের পর প্রাচীন ভবিষ্যতবাণি অনুযায়ী অন্য আর যে গ্রহটির অস্তিত্ব চিহ্নিত হওয়া বাকী থাকে সেটি হলো এ্যাপোলো, বৃষের প্রকৃত শাসনকর্তা। এর পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রক গ্রহের কম্পনের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি রাশির আচরণ নির্ধারিত হবে। বারোটি রাশির জন্যে থাকবে বারোটি স্বর্গীয় বস্তুপিন্ড। মজার ব্যাপার হলো গ্রীক মিথোলজিতে ভলকান হলো একজন খোড়া অথচ খুবই ক্ষীপ্র মস্তিষ্কের অধিকারী দেবতার নাম। অনেক কন্যা জাতকই সামান্য খুড়িয়ে চলে, নতুবা তাদের মধ্যে হাঁটবার বা দাড়াবার ব্যাপারে কোন অস্বাভাবিকতা রয়েছে।
প্রেমে পড়ে উন্মাদ কিংবা টাকা পয়সা হাতে থাকলে পাগলের মতো খরচ করবে এমন কন্যা জাতক আপনি কোথাও পাবেন না। দুটো ক্ষেত্রেই সাধারণত তারা বেশ বিচক্ষণ। তারা ভালোবাসার ক্ষেত্রে বেশ শান্ত এবং স্খীর, আর ভালোবাসার প্রকাশ তাদের মধ্যে ক্ষিণ, আর টাকা-পয়সা লেনদেন বা খরচের ক্ষেত্রেও সে ঠিক ততোটাই রক্ষণশীল। অদ্ভুত হলেও সত্য যে, কন্যারা যেমন অন্যদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে নিবেদিত প্রাণ তেমনি অন্যের থেকে সাহায্য গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা ঠিক বিপরীতভাবেই দু:শ্চিন্তাকারী এবং এটা তারা তীব্রভাবে ঘৃণা করে। তারা কোন ব্যাপারেই অন্য কারোর কাছে ঋণি হতে চায় না। এবং তারা নিজেদের উপর ছাড়া আর কারোর উপরই কোন ব্যাপারে নির্ভর করতে চায় না। তাদের ভেতরে দৃঢ় গেথে যাওয়া ভয় (যে বৃদ্ধ বয়সে তাদেরকে অন্যের উপর নির্ভর করতে হবে) -এর কারণে তারা এতোটাই সস্তা জীবন যাপন করে যে বলা যায় তারা কৃপণ। কিন্তু এই শব্দটা হয়তো একটু বেশিই কর্কশ হয়ে গেলো। যখন তাদের প্রচুর পরিমাণ নিরাপত্তা রয়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্যে দু:শ্চিন্তা করারও কোন ভয় নেই তখন কন্যা জাতকেরা হাত খুলে খরচ করে, কিন্তু তখনও তাদের মধ্যে ব্যয়িত অর্থের সমপরিমাণ সুবিধা অর্জনের ইচ্ছাটা প্রকটই থাকবে - নতুবা দোকানে জিনিস ফেরত দিয়ে টাকা ফেরত নিয়ে নেবে।
যদিও তার মধ্যে ভিখারী কিংবা ঘুড়ে ফিরে সময় অপচয়কারী যারা, তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই কিন্তু কোন বন্ধু বিপদে পড়লে সে নিশ্চিতভাবেই মহৎ হয়ে উঠবে। যেসব কন্যা জাতকেরা নিজের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদীর ব্যাপারে খুবই কৃপণ তারাও তাদের প্রিয় মানুষ বা ভালোবাসার মানুষ, কিংবা যারা তার কাছ থেকে পাবার মতো অধিকার রাখে তাদের বিপদে চমৎকারভাবে অর্থনৈতিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু তা সত্বেও কোন কন্যা জাতককে অযথা, কিংবা বেপড়োয়াভাবে টাকা খরচ করে বেড়াতে দেখবেন না, কেননা অপচয় তার চির অপ্রিয় একটা ব্যাপার। কন্যারা নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে পরিশ্রম করে, এবং অমিতব্যয়িতা কখনই তাদেরকে বিস্মিত করতে ব্যর্থ হয় না। যারা অমিতব্যয়ি এবং যারা অলস তাদের সম্পর্কে সাধারণত তাদের কিছু না কিছু বলার থাকে।
একটা ব্যাপার জানা থাকলে হয়তো কন্যাদের সমালোচনা করবার আচরণকে কিছুটা হলেও দমাতে সক্ষম হবে - সেটা হলো তারা যেমন আপনার ব্যাপারে সমালোচনাকারী, তেমনিভাবে তারা গোপনে নিজেদের ব্যাপারেও সমান সমালোচনাকারী। সে ভুলগুলো না দেখে পারেই না, কেননা সে জন্মই নিয়েছিলো ফুলদানিতে সূক্ষতম একটা দাগকেও চিহ্নিত করে দেবার জন্যেই। অপব্যায়ের মতোই কোন কাজে দেরী করাকেও সে সমান অপছন্দ করে। প্রকৃতপক্ষে দেরী করাটাও এক ধরনের অপচয়। এটা সময়ের অপচয়, এবং কন্যাদের কাছে সময় এমন একটা জিনিস যেটা দিয়ে আমাদের জীবন তৈরি হয়েছে। তাই সময় জ্ঞাণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন যদি তার কৃপণ কুটমন্তব্যগুলো থেকে বাঁচতে চান। ফন্সাংক সিনাটরার বন্ধু ঠিকই বুঝেছিলেন যে, যখন এই গায়কটি “আটটায় ডিনার” এর কথা বলে তখন ঠিক আটটার কথাই বলে, আটটা পনেরো কিংবা আটটা ত্রিশের কথা বলে না। যদিও সিনাট্রা একজন উষä এবং আগুণে ধনু রাশির জাতক কিন্তু তার মধ্যে কন্যা রাশির প্রভাব ছিল, অতএব এটা বোঝাই যাচ্ছে যে কেন সে রিহার্সিং করার ব্যাপারে এতোটা ভয়কাতুরে, এবং কেনই বা সঙ্গিতের প্রতিটি সূক্ষ্মতম বিষদই তাকে জানতে হবে।
প্রতিটি নোট এবং টোন একদম শুদ্ধ হতে হবে নয়তো যতক্ষণ না তার মন মতো হয় ততক্ষণ রেকর্ডিং পুন:পুন: চালিয়েই যেতে হবে। আর এতোটা সতর্ক, নির্ভুল রুচিবোধ, তাও আবার ধনুর অগ্নি এবং উষäতায়, আর তাছাড়া আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন কেন সে সঙ্গিত বিক্রি করতো। এটা বোঝা মুশকিল যে কেন কন্যা জাতকদেরকে মাঝে মাঝে সার্থপর বলে অপবাদ দেয়া হয়, কেননা তারা তো নিজেদের অভিলাষ থেকে অন্যের প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সার্থপর আখ্যাটা হয়তো কন্যাদের কোন ব্যাপারে ‘না’ বলা এবং সেটাকে সত্যই পালন করার বৈশিষ্ট্যের কারণে এসেছে। সে নিজের সময় এবং শক্তি দুটোই স্বাধীনভাবে ব্যয় করবে কিন্তু সেটা কোন যুক্তিযুক্ত সীমার বাইরে গিয়ে নয়। যখন চাহিদা অতিরিক্ত হয়ে যাবে, তখন কন্যারা পিছিয়ে যাবে এবং তার অভিযোগ পরিস্কারভাবে উপস্খাপন করবে, হয়তো একটু বেশিই পরিস্কারভাবে। যতোটা সে অন্যের ভুল ধরতে পছন্দ করে ঠিক ততোটাই তীব্রভাবে ঘৃণা করে যে তার ভুলের কেউ সমালোচনা করুক। যদিও কন্যা জাতকেরা কদাচিৎ ভুল করে, তবু যদি করে, তাহলে খুব কৌশলে তার ভুল সম্পর্কে তাকে বলুন যদি আপনি তার সাথে বন্ধুত্ব রাখতে চান।
ওষধের দোকানে বারং বার ভ্রমণ সত্বেও কন্যা জাতকেরা বিস্ময়করভাবে সু সাস্খের অধিকারী (যদি না তারা কোন অসুস্খ্যতার দু:শ্চিন্তা করে, মানসিক অশান্তিতে না ভুগে আর নেতিবাচকতায় না ভুগে।) তারা তাদের শরীরের ভালো যত্ন নেয় এবং তারা তাদের খাবার দাবারের ব্যাপারে খুত খুতে। তারপরও, তারা হয়তো ছোট খাট অসুস্খতার কথা অভিযোগের সূরে বলবে, যেমন, পেট খারাপ, বদহজম, পাকতন্ত্রে দীর্ঘস্খায়ী ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং পায়ের সমস্যা (ভলকানের কথা মনে আছে, সেই খোড়া দেবতা?) বুকে কফ জমলে নিজেদের যত্ন নেয়া উচিত তাদের, কেননা জন্মকুষ্ঠিতে ভিন্ন ভিন্ন গ্রহের প্রভাব থাকলে ফুসফুসের অসুস্খ্যতার কাছে তারা দূর্বলভাবে ধরা দেয়। নিতম্বে, হাতে, কাধে, গাটের ব্যথা, আর্থরিটিস, এবং রিউমিটিক সমস্যা দেখা দিতে পাওে এবং মাঝে মধ্যে লিভারে কিংবা পিঠে ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু যেসব কন্যারা তাদের সাস্খ্যের যত্ন নেবে, তারা অনেক মারাত্মক রোগ বালাই থেকে মুক্ত থাকবে। কন্যা জাতকদের অধিকাংশই আবার সবজীভোজী। যদি সেটা না হয়, আপনি বাজী ধরতে পারেন তারা নিশ্চিতভাবে জানবে কোন জিনিসটা তাদের খাওয়া উচিত এবং সেটা কিভাবে রাধতে হবে। আগে বা পড়ে আপনি হয়তো একজন জীবাণু সচেতন কন্যা জাতকের সাথে মিলিত হবেন, যে রাবার গ্লাভস পড়ে মাংস ধরে এবং নিজের টুথব্রাশ প্রতিদিন গরম পানি দিয়ে পরিস্কার করে, কিন্তু অবশ্যই এটা চরম একটা ক্ষেত্র। তথাস্তু, যারা কন্যা রাশির সাধারণ বৈশিষ্টের অধিকারী তারাও খাবার আগে নিজের হাতটা উপূর্যপরী পরিস্কার করে নেবে।
কন্যারা বেড়াল, পাখি এবং ছোট, অসহায় জীব-যন্তু ভালোবাসে। তারা সত্যকেও ভালোবাসে, ভালোবাসে সময়ানুবর্তিতা, মিতব্যয়িতা, বিচক্ষণতা, এবং সাতন্ত্র পছন্দবোধ। তারা ঘৃণা করে লোক দেখানো আবেগ, ধুলা, অশ্লীলতা, অলসতা, এবং শুয়ে বসে কাটানো। তাদের স্বভাব খুবই বাস্তববুদ্ধি সম্পন্ন, তাদের মধ্যে চরম মাত্রায় বৈষম্য লক্ষ্য করা যায় - তারাই সত্যিকার সাতন্ত্রবাদী, তাদের আগ্রহী উপলব্ধি তাদের আকাংঙ্খাকে বাজে এবং বেদনাদায়ক ভাবনার সাথে যুক্ত করে না। কন্যাজাতকদের স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে একটা সুবাতাস প্রবাহীত হয় যেটা তাদেরকে বন্য এবং কাল্পনিক স্বপ্ন বা প্রত্যাশা থেকে মুক্ত রাখে। জীবনের বিষদ ব্যাপারগুলো তার উপর এসে চেপে বসবার আগেই যদি সে সেগুলোর দখলটা নিতে সক্ষম হয় তাহলে অন্যান্য রাশির আর সবার থেকেই জীবনে সফলতা লাভের সম্ভাবনা তার বেশি।
ঠান্ডা সবুজ জেড এবং খাঁটি প্লাটিনাম তার জন্যে সৌভাগ্য বয়ে আনে। কিন্তু কন্যা জাতকদের সৌভাগ্য সবসময়ই পাঁচধরনের একাকিত্ববোধের মুখোমুখি হয়ে তবেই আসে। এবং দায়িত্বের অবিরাম ডাক কখনই এই ভদ্র হৃদয়গুলোতে স্তব্ধ হয় না। ভুলে যাবেন না যে এই লাজুক, বিষাদগ্রস্ত কন্যারা সবসময়ই একটা দুটো বিষয় গোপনে পুষে রাখে। যতই সে তার প্রিয় ধূসর, ক্রিম রঙ, নেভী ব্লু কিংবা সবুজের যে কোন রঙ এবং দুধ শাদা পোশাকে সজ্জিত হোক না কেন তার শান্ত রক্তে সবসময়ই বুধের অস্খির প্রকৃতি এবং ভলকানের দূরবর্তী বজ্র ঠিকই নেচে বেড়াচ্ছে। তার গম্ভীর প্রতিকৃতির মধ্যে তরুনীদের সৌন্দর্যের আকর্ষণটাও রয়েছে - চিন্তা এবং কাজে খাটি হওয়াটাই কন্যা রাশির মূলভিত্তিকে উপস্খাপন করে। একবার এই ইস্টারের ফুলকে জানতে পারলে তার মোহ থেকে মুক্ত হওয়া আপনার জন্যে কঠিন হযে উঠবে। প্রতিটি বসন্তেই আপনার স্মৃতিতে এসে কড়া নাড়বে তার মুখ। আপনার হৃদয়ে নিজের জায়গা করে নেবার জন্যে কন্যাদের নিজস্ব একটা পথ আছে।